কুমিল্লার বুড়িচং এ গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ দশা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার মানুষ কল্পনাও করেনি গতকাল রাতের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এ ধরনের কোন পূর্বভাস ও তাদের কাছে ছিল না।

গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙায় ক্ষতি

গোমতি নদীর বাঁধ কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় সে চেষ্টা করেছে সাধারন মানুষ। কিন্তু মধ্যরাতে বাঁধটি ভেঙে যায়। কুমিল্লার বুড়িচং এ গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙায় পানির স্রোতের যে মাত্রা সেই মাত্রা কোনভাবেই স্বাভাবিক বন্যার পানির মতো না। ফলে ছয়টি উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ এই বন্যার পানিতে আটকা পড়েছে। পানিবন্দী মানুষদের জন্য সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে তাদের উদ্ধার করা। উদ্ধারের জন্য শিক্ষার্থীরা ও ভলেন্টিয়াররা শিশু, নারী, গবাদি পশুদের কে বাঁচানোর চেষ্টা করেছ। স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসা বাড়ি, দোকানপাট সব জায়গায় পানিতে ভাসছে।যদিও সকাল থেকে বৃষ্টিপাত হয়নি তারপরও পানির পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে।বৃষ্টি হলে এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেত।

কুমিল্লায় গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙ্গার কারণ

ভারতের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লার হোমনা, তিতাস ও মুরাদনগর উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে ৪০ টি গ্রাম। চারদিকে মানুষের হাহাকার সম্পদ নয় এখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুখ্য বিষয়। এই তিন উপজেলায় নতুন করে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে কুমিল্লায় ভয়ংকর তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্যা। 

গোমতী নদীর পানি বাড়ার ফলে কি কি ক্ষতি হয়

শুক্রবার সকালের সরজমিনে দেখা যায় গত তিনদিন ধরে টানা ভারি বর্ষণ এবং ভারত থেকে তীব্র বেগে নেমে আসা পাহাড়ি ডলে হু হু করে বাড়ছে গোমতি নদীর পানি। বুধবার রাত থেকে হোমনা ও তিতাস উপজেলার পাশের বেরিবাদের ভেতরে এবং নদীর তীরবর্তী এলাকার কলাকান্দি ইউনিয়নের আফজালকান্দি মানিকনগর ভিটিকান্দি ইউনিয়নের দাশকান্দি দুলারামপুর ও তরীকান্দি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় ও রসুলপুর গ্রামে পানি ডুকে পড়ে।নদীর পানি বাড়ার ফলে উপজেলার আলীরচর বেরিবাদ ভেঙে যায়। এ সময় এলাকার অধিকাংশ বাড়ি ঘরে পানি উঠতে শুরু করে।

স্থানীয়রা জানায় গত ৪০ বছরে গোমতী নদীর এত স্রোত দেখেনি মানুষ। পানির স্রোতে ইতিমধ্যে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে উপজেলার নারান্দিয়া ভিটিকান্দি ইউনিয়ন সহ প্রায় ১৫ গ্রামের লক্ষাদিক মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও তলিয়ে গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রাস্তাঘাট ও ফসলের জমি। এছাড়াও দেশব্যাপী তীব্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

 

তিতাস উপজেলার দাসকান্দির সাহায্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

বৃহস্পতিবার থেকে তিতাস উপজেলার দাসকান্দি রক্ষায় উপজেলার স্থানীয়রা সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। পানিবন্দী মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবার। আশ্রয় কেন্দ্র চালু রাখা হয়েছে। শরৎ ঋতুতে পা দিতেই হঠাৎ অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে দেশের উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ জেলা গুলো।

কয়টি  জেলায় মানুষ পানি বন্দী ও ক্ষতিগ্রস্ত

দশটি জেলার ৬৫ উপজেলার প্রায় ৫,৮৬,০৪০ টি পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোক প্রায় ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার।ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয় ইন্টারনেট ব্যবস্থা। ফলে খবর মিলছে না বিপদে পড়া এই মানুষগুলোর।

কেন নোটিশ ছাড়ায় ভারত পানি ছেড়েছে

ভারতের ডুম্বুর বাঁধ

ভারতের ত্রিপুরার বন্যার চাপ সামলাতে ১৯৯৩ সালের পরে অর্থাৎ ৩১ বছর পর এবার ত্রিপুরায় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের সবকটি জলপ্রপাত একযোগে খুলে দেয়। বিনা নোটিশে ভারত পানি ছেড়ে দেয়।

এর ফলে দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা কবলিত হয়। যেকোনো ভাটির দেশে যাতে বন্যার কবলে না পরে সেজন্য দেশটিকে আগেই প্রস্তুতির কথা জানানো হয় এটিই আন্তর্জাতিক নিয়ম। কিন্তু ভারত কখনোই সেই নিয়মের ধার ধারে না। তাদের ইচ্ছামত বাত বা ব্যারেজ খুলে বাংলাদেশের দিকে পানি ছেড়ে দেয় যা একেবারে অমানবিক। এটিতে ভাটিতে ভাসছে বাংলাদেশ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নোবেল বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস এই নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। 

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চল 

ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় সব সেলফোন টাওয়ার বিদ্যুৎ হারিয়েছে। রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে এবং রাস্তাগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, জরুরী ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধারকাজে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বাসিন্দারা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যে কোনও জলের স্তর দেখেছেন তার চেয়ে বেশি বর্ণনা করেছেন৷

আহমেদ ফারাবীবলেছেন, “আমি ২০০৪ সালের বন্যার কথা মনে করতে পারি, কিন্তু আমার মনে আছে পানির স্তর এত বেশি ছিল না,” নোয়াখালীর বাসিন্দা, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলির মধ্যে একটি, যেখানে তিনি অনুমান করেছিলেন যে ৯০ শতাংশ বাড়িঘর হাঁটু পর্যন্ত জলে প্লাবিত হয়েছিল। তিনি বলেন, “এবার, খাল ও জলাভূমি ভরা থাকায় বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না।”

ফেনী ও কুমিল্লার বন্যায় পরিদর্শন করেছেন সেনাপ্রধান

ফেনী ও কুমিল্লার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকরুজ্জামান। দুপুরে তিনি হেলিকপ্টার যোগে ফুলগাজী ও পরশুরাম সহ কুমিল্লার বেশ কিছু এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন সেনাবাহিনীর সদস্যদের। ওয়াকরুজ্জামান কুমিল্লায় পৌঁছানোর পর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান কর্মকর্তারা। সেখানে কার্যক্রম শেষে আবারও হেলিকপ্টারে সেনাপ্রধান।

শুরুতেই কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা ও পরে ফেনীর ফুলগাজির বন্যা কবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন বাড়ির ছাদে যেসব মানুষ অবস্থান নিয়েছিল তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেন সেনাপ্রধান।

ফেনির পরশুরামে তিনি পর্যবেক্ষণ করেন সেনাবাহিনীর ত্রাণ কার্যক্রম উদ্ধার তৎপরতা। ঢাকায় ফিরে আসেন এর আগে শুক্রবার সকালে জানানো হয় ফেনী, চট্টগ্রাম,  কুমিল্লা, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সেনাবাহিনীর সব সদস্যদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধান উপদেষ্টা প্রান্ত তহবিলে দেয়া হয়েছে।